বাজেটে ব্রাত্য বাংলা

Share the News

২ ফেব্রুয়ারি,কলকাতা: গতবার ১৮ জন বিজেপি সাংসদ নিয়েও বাজেটে বাংলা ছিল বঞ্চিত, এবারেও ১২ জন সাংসদ নিয়েও বাংলার ভাগ্যে সিকে ছিঁড়ল না। ১ তারিখ দেশের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন কেন্দ্রীয় বাজেট পেশ করলেন। এই বাজেট ভারতের বাজেট না বিহার, দিল্লি, অন্ধ্রের বাজেট , এই নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিরোধীরা। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী সহ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, অমিত মিত্র প্রমুখ এই বাজেটকে দিশাহীন আখ্যা দিয়েছেন।
গত অর্থবর্ষের সংশোধিত বাজেটের থেকে অর্ধেকেরও কম হয়ে গিয়েছে দমদম বিমানবন্দর-নিউগড়িয়া ভায়া রাজারহাট মেট্রো প্রকল্পের বরাদ্দ। এই প্রকল্পে গত অর্থবর্ষে সংশোধিত বাজেট ছিল ১৫৫০ কোটি। এবার তা হয়েছে ৭২০.৭২ কোটি। ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর ক্ষেত্রে সে অর্থে কোনও বদল হয়নি। এই প্রকল্পে গত অর্থবর্ষে বরাদ্দ হয়েছিল ৯০৬ কোটি টাকা। সংশোধিত বরাদ্দে যা কমে হয়ে গেছে ৫০০ কোটি টাকা। এবারও কোনও বদল হয়নি। সামান্য বেড়েছে জোকা-বিবাদি বাগ ভায়া মাঝেরহাট মেট্রোর বরাদ্দ। গত অর্থবর্ষে ১২০৮.৬১ কোটি টাকা বরাদ্দ হলেও সংশোধিত বাজেটে তা কমে হয় ৮৫০ কোটি টাকা। এবার তা ৬৪ কোটি টাকা বেড়ে হয়েছে ৯১৪ কোটি টাকা। শুধু বাংলা নয়, বঞ্চনার ছবি দেখা গেল রেলের সুরক্ষার দিকেও। আলাদাভাবে সেভাবে সুরক্ষা ব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর কোনও ইঙ্গিত মিলল না। পরপর দু’বছর রেলের বাজেট আটকে থাকল ২.৫২ লাখ কোটি টাকাতেই। নতুন রেল লাইন, নতুন ট্রেন, নতুন স্টেশন, নতুন কারখানা— কিছুরই ঘোষণা করা হল না।
বাংলার উত্তর অংশের অর্থনীতি মূলত চা নির্ভর। অথচ চা নিয়ে একটিও শব্দ খরচ করেননি অর্থমন্ত্রী। টি অ্যাসোশিয়েশন অফ ইন্ডিয়ার উত্তরবঙ্গের চেয়ারম্যান চিন্ময় ধর বলেন, ‘এই বাজেট নিয়ে কিছু বলার নেই আমাদের। আমরা আশাহত। গত একবছর চায়ের নিলাম, চায়ের উৎপাদন দুই ক্ষেত্রেই মার খেয়েছি আমরা। হাজার হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে উত্তরবঙ্গে। ন্যূনতম কোনও বিশেষ সুবিধাও আমরা পেলাম না।” আগে বিশেষ প্যাকেজ ঘোষণা হত। গত কয়েক বছর এসব উধাও। ২০২৪ সাল উত্তরবঙ্গের চা-শিল্পে মহাসংকট তৈরি করে। পাশাপাশি বিদেশ থেকে (কেনিয়া) অবাধে চা আমদানি হয়েছে। গত ৫ বছরের বাজেট বিশ্লেষণ করে চা-মহলের একাংশ জানিয়েছে, উত্তরঙ্গের চা-শিল্প কার্যত বঞ্চিত। দেশে এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি চা-শিল্পে মানুষ কর্মরত। বিদেশে চা-রপ্তানিতেও গত ১০ বছর যথেষ্টই পিছিয়ে রয়েছে দেশ। চা উৎপাদন করতে যে খরচ হয়, সেই টাকাই উঠে আসে না অনেক বাগানে চা বিক্রি করে। আর একবার চায়ের মিনিমাম ফ্লোর প্রাইস ঠিক করার দাবিও করেছেন অনেকেই।
বিহার বন্যার জন্য বাজেট পেলেও বাংলা এক পয়সাও পায়নি। বাংলার উত্তরে এইম্‌স ও শিলিগুড়িতে মেট্রোর কোনও ঘোষণা এই বাজেটে আসেনি। উড়ান প্রকল্পে বিহার পেলেও বাংলার ভাগ্য প্রায় শূন্য। বাজেটে পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির উন্নতির কথা বললেও বাংলা ব্রাত্যই থেকে গেল। ঘাটাল ও কান্দি মাস্টার প্ল্যানে বরাদ্দ শূন্য। গঙ্গা ভাঙন রোধে নেই কোনও বরাদ্দ। বেঙ্গল কেমিক্যালস এর জন্য বরাদ্দ মাত্র এক লক্ষ টাকা। রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণার উৎকর্ষে স্বাক্ষর রাখার প্রতষ্ঠানগুলির প্রাপ্তি প্রায় শূন্য। বরং এই অর্থ পেয়েছে বেসরকারি সংস্থাগুলি।
‘ভারতীয় ভাষা পুস্তক প্রকল্পে’ স্কুল এবং উচ্চ শিক্ষায় বিভিন্ন ভারতীয় ভাষার ডিজিটাল বই তৈরির বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন সদ্য প্রাক্তন রাজ্যসভার সাংসদ জহর সরকার। তিনি বলেন, “ভাষিণী অ্যাপটির মাধ্যমে বিভিন্ন ভারতীয় ভাষা তর্জমা করে আদানপ্রদানের কথা বহু দিন ধরে বলা হলেও তা এখনও নড়বড়ে। ভাষা চর্চায় ভারতের বহুভাষিক ঐতিহ্য রক্ষার বদলে ঘুরপথে হিন্দির প্রভাব বাড়ানোই এই সরকারের লক্ষ্য।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *