বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পথের পাঁচালী’র দুর্গার মৃত্যু ঘটেছিল আকস্মিক, বৃষ্টিতে ভিজে, অতি অল্প বয়সে। কালজয়ী ও ক্লাসিক এই উপন্যাসের চলচ্চিত্ররূপেও তাই দেখানে হয়েছিল। গল্পের কিশোরী মেয়েটিকে ওই ছবিতে যিনি জীবন্ত করে তুলেছিলেন– রসিকজনের কাছে যিনি নাম-চরিত্রের মতো ‘দুর্গা’ নামেই পরিচিত হয়ে গিয়েছিলেন– প্রয়াত হলেন তিনি, যথেষ্ট বৃদ্ধা বয়সে, দুরারোগ্য রোগে ভুগে। তিনি উমা দাশগুপ্ত। সোমবার, ১৮ নভেম্বর সকাল ৮.১৫ নাগাদ প্রয়াত হন উমা। সত্যজিৎ রায়ের ‘পথের পাঁচালী’র ‘দুর্গা’ উমা দাশগুপ্তের জীবনাবসানে শোকের ছায়া শিল্প-সংস্কৃতি মহলে।
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পথের পাঁচালী’র দুর্গা ঠিক যেন পাশের বাড়ির মেয়ে। কী আশ্চর্য সহজ-সরল ও সাধারণ! আর ওই অলৌকিক সাধারণত্বই তার অসাধারণত্ব। সেই অপূর্ব অসাধারণত্বকে যিনি ছোট ছোট শিল্পকাজের মধ্যে দিয়ে অবলীলায় পর্দায় ফুটিয়ে তুলেছিলেন, অনায়াসে হয়ে উঠেছিলেন অপুর দিদি, তিনি উমা দাশগুপ্ত।
জীবনে এই একটি ছাড়া দ্বিতীয় ছবি করেননি। কেন করেননি, সেটা একটা প্রশ্ন। কিন্তু সেই রহস্য কেউ ভেদ করেননি, তিনি নিজেও না।
শুধু জানা যায়, থিয়েটার আঁকড়েই বাঁচতে চেয়েছিলেন উমা। ছোট থেকেই থিয়েটার করতেনও। যে-স্কুলে পড়তেন তার প্রধানশিক্ষকের সঙ্গে সখ্য ছিল সত্যজিৎ রায়ের। সেই শিক্ষকের সাহায্যেই তাঁর ‘দুর্গা’কে খুঁজে পান সত্যজিৎ। পরিবার প্রথমে রাজি না হলেও, পরে সত্যজিৎ অনুমতি আদায় করে নেন। তার পর তো ইতিহাস তৈরি হয়ে যায়!
যে আবাসনে উমা দাশগুপ্ত থাকতেন, সেই একই আবাসনে থাকেন অভিনেতা-পরিচালক-বিধায়ক চিরঞ্জিৎ চট্টোপাধ্যায়। তিনিই প্রাথমিক ভাবে উমাদেবীর প্রয়াণের খবর নিশ্চিত করেন। তিনি শোকও প্রকাশ করেন উমাদেবীর প্রয়াণে।
সাদা-কালো ব্যাকগ্রাউন্ডে অপু-দুর্গার সেই চরিত্রচিত্রণ আজও সকলের মনে সজীব স্মৃতি হয়ে আছে। সত্যজিতের সিনেমা-উত্তর বাঙালি আজও বিভূতিভূষণের ‘পথের পাঁচালী’ পড়তে গেলে মানসচক্ষে যেন সিনেমার দুর্গাকেই দেখে। দীর্ঘদিন অন্তরালে থাকলেও বাঙালির স্মৃতি-সত্তায় তাই তাঁর কালজয়ী উপস্থিতি।